সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫

আহসান মঞ্জিল প্রদর্শন...





বুড়িগঙ্গার তীরে ইসলামপুরের কুমারটুলিতে রয়েছে বাংলার অন্যতম নজড়কাড়া ঐতিহাসিক নিদর্শন আহসান মঞ্জিল প্রায় প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীর পদচাড়নায় মুখরিত থাকে এই গোলাপি প্রাসাদ তথা আহসান মঞ্জিল এপ্রিল , ২০১২ তে ঘুরে এলাম বাংলার এই ঐতিহাসিক স্থানটি ইতোপূর্বে বহুবার যাওয়া হলেও এবার যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল পিপীলিকা ডট কমের জন্যে আহসান মঞ্জিলের উপর মোটামুটি জ্ঞানগর্ভ একটা পোস্ট লেখা প্রথমের শুরু হোক আহসান মঞ্জিল এর ইতিহাস দিয়ে
 
আহসান মঞ্জিলের ইতিকথা:
বর্তমানে যে জায়গার উপর আহসান মঞ্জিল দাঁড়িয়ে আছে সেটা পূর্বে ইসলামপুরের কুমারটুলি নামে পরিচিত ছিল। এটি ঢাকা শহরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। জমিদার শেখ এনায়েতুল্লাহ তঃকালীন জালালপুর পরগণায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে মাঝামাঝি সময়েরংমহলনামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। অতঃপর কিছুদিন পরে শেখ এনায়েতুল্লাহ মারা গেলে তাঁর ছেলে শেখ মতিউল্লাহ বিলাসবহুল প্রমোদভবনরংমহল”-টি তঃকালীন ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর সেখানে ফরাসিরা তাঁদের বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। ফরাসিরা এই এলাকায় (বর্তমান যে অংশে আহসান মঞ্জিল আছে) উত্তর-পশ্চিম কোনায়ল্যুসজাল্লানামে একটি চৌবাচ্চা নির্মাণ করে। চৌবাচ্চাটি ছিল অপেক্ষাকৃত গোলাকার। কিছুদিন পর ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ  ফরাসি বণিকদের কাছ থেকে কুঠিটি কিনে নেন এবং বসবাসের উদ্দেশ্যে সংস্কার করেন। খাজা আলিমুল্লাহর ছেলে নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৫৯ সালে প্রাসাদটি পুনরায় নির্মাণ করেন আর প্রাসাদটি তাঁর স্বীয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামেই নামকরণ করে রাখেনআহসান মঞ্জিল
অতঃপর ১৮৮৮ সালের ৭ই এপ্রিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আহসান মঞ্জিলের অন্দরমহলের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়, সব মিলিয়ে প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়ে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আহসান মঞ্জিল কে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং বর্তমানে যে সুউচ্চ গম্বুজটি দেখা যায় এমনই একটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়। ত্ৱকালীন সময়ে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো সুউচ্চ ভবন ঢাকায় ছিলোনা। তাই তখন বহুদূর থেকেও আহসান মঞ্জিলের জাঁকালো গম্বুজটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। বড় গম্বুজসহ যে অংশটি রয়েছে তাকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন, যেটা আগে রঙমহল ছিল আর এর পাশেই আরেকটা অন্দর মহল আছে, যাজানানানামেও পরিচিত ছিল। গম্বুজওয়ালা প্রাসাদ ভবনটি দুটি সুষম ভাগে ভাগ করা। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের উপরে সুউচ্চ অষ্ট-কোণ গম্বুজটি উত্তোলিত। এর পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, প্লেয়িং কার্ড রুম, গ্রন্থাগার তিনটি মেহমান কক্ষ এবং পশ্চিমাংশে একটি নাচঘর, হিন্দুস্থানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। নিচ তলায় পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল এবং পশ্চিমাংশে দরবার ঘর, বিলিয়ার্ড কক্ষ এবং কোষাগার। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে এবং অন্যান্য কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ঢাকার নওয়াবগণ স্থানীয় মহাজন এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অব্যবস্থায় পতিত জমিদারী পরিচালনার ভার ১৯০৭ সালে নওয়াব সলিমূল্লাহ কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন
১৯১৫ সালে নওয়াব সলিমূল্লাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর স্বীয় পুত্র হাবিবুল্লাহ তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হলে ঋণের দায়ে একের পর এক জমিদারী পরগনাসমূহ হারাতে থাকেন। তাছাড়া অন্যান্য সন্তানেরা যার যার মত সম্পত্তি নিয়ে আলাদা হয়ে যান। নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল এর ফলে ধীরে ধীরে অবহেলায় ভবনটি পরিত্যক্ত হতে থাকে। অতঃপর ১৯৫৮ সালে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মারা গেলে তাঁর পুত্র খাজা হাসান আসকারী নামেমাত্র নওয়াব হন। অতঃপর বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার পর, বিভিন্ন নেতাবৃন্দের বিভিন্ন পরিকল্পনা, সম্মতির পরে ১৯৯২ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহসান মঞ্জিল জাদুঘর উদ্বোধন করেন

আহসান মঞ্জিল এটা কী নিয়ে গঠিত  ?
দেখার মতো বেশ অনেক কিছুই আছে এই পিঙ্ক প্যালেসে। সবই যদি বলে দেই তাহলে পরে জানা জিনিস দেখে আর কি মজা পাবেন ? তাঁর চেয়ে বরং সপরিবারে/সবান্ধব ঘুরে আসুন বাংলার ঐতিহাসিক এই স্থানটি। নিজের চোখেই আবিষ্কার করুন একের পর এক জিনিস। এতোটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, যদি আগে গিয়ে না থাকেন, তাহলে সময় নিয়ে প্রতিটা জিনিস দেখে আপনার ভালোই লাগবে। সময়ের অপচয় হবেনা

যেভাবে যাবো আহসান মঞ্জিল?
যারা ইতোপূর্বে আহসান মঞ্জিল যান নি, তাদের বাসা যদি পুরান ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে হয় তাহলে সরাসরি সি এন জি তে করে আহসান মঞ্জিল চলে আসতে পারেন। আর যদি বাসা কাছে হয় পুরান ঢাকার তাহলে রিকশা নিয়েই যেতে পারেন। যারা ঢাকার বাহিরে থেকে আসছেন তারা বাসে/লঞ্চে করে বাবুবাজার/সদরঘাট পর্যন্ত এসে রিকশা করে চলে আসতে পারেন

যখন যাদুঘর প্রদর্শিত হয়:
১০-১০.৩০ এর মধ্যে জাদুঘর খুলে দেয়া হয়। টিকেট কেটে আপনাকে ঢুকতে হবে, সাধারণত সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খোলা থাকে। শনিবারবুধবারের জন্যে এই সময়সূচী প্রযোজ্য। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ, আর শুক্রবার বিকেল -.৩০ এর পরে খোলে। তো যেকোনো একদিন চলে যান, আর ঘুরে আসুন আহসান মঞ্জিল। পিপীলিকার পোস্টগুলো কেমন লাগছে? কি ধরণের লেখা চান আপনারা কমেন্টে জানাতে পারেন। নতুন ব্লগ হিসেবে পাঠকের মন্তব্য পেলে বেশ ভালোই লাগে