পর্যটন স্থান কচিখালী :
সুন্দরবণ পুর্ব অভয়ারন্যের পুর্ব দক্ষিন প্রান্তে স্গর তীর ঘেষে সারি সারি তালগাছ আর নারিকেল বাগান নিয়ে গড়ে উঠেছে কচিখালী কেন্দ্র।এখানেও নির্মিত হয়েছে একটি বড় ধরনের মনোরম বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের পারিপার্শিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এই বিশ্রামাগারে এক শয্যা বিশিষ্ট ৩টি ও ২ শয্যা বিশিষ্ট ১টি কক্ষ এবং ড্রইং ও ডাইনিং রুম রয়েছে। কচিখালীর অন্যতম আকর্ষণ সাগর সৈকত আর সনক্ষেত, প্রকৃতি এখানে স্বাভাবিক বুক্ষাবরন উম্মোচন করে মেলে ধরেছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরীন সৌন্দর্যকে। তাইতো কৌতুহলী পর্যটকদের এখানে এতো আনাগোনা। তারা এখানকার সাগর পাড় আর সনক্ষেতের ভিতর খুজে ফেরে বহু প্রতাশ্যিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দর্শন লাভ আর তাদের দেখে চকিত নয়নে থমকে দাড়ায় ঝাঁক ঝাঁক বাধা বনের চিত্রল হরিণ, দুর থেকে ছুটে বেড়িয়ে বন্ধুদের জানিয়ে দেয় পর্যটকদের আগমন বার্তা, তাই শুনে বেরিয়ে এসে মুচকি হাসে বানরকুল আর বন্য শুকোরা বনরক্ষীদের প্রহরায় কচিখালী থেকে পায়ে হেঁটে জামতলা পৌছানো সম্ভবঅ সুন্দরবনের মধ্যে পায়ে হাটার এ সুযোগ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত উপভোগ্য। কটকার মত কচিখালী যাবার জন্য ও খুলনা/মংলা থেকে জলযান ভাড়া পাওয়া যেতে পারে এবং মংলা – কটকা ও মংলা – কচিখালীর দুরত্ব প্রায় সমান। মংলা হতে কচিখালীর দুরত্ব ১০৬ কিঃ মিঃ। আবার কটকা থেকে অতি সহজে কচিখালী ভ্রমন করা যেতে পারে। কচিখালীতে অবস্থিত বন বিশ্রামাগার ও পর্যটকদের জন্য রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষে ভাড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বছর কচিখালীতে অক্টোবর হতে মার্চ পর্যন্ত মৌসুমী মাছের হাট বসে। অসংখ্য জেলে কচিখালীর চরে অস্থায়ী ঘর তুলে জেলে পল্লী গড়ে তোলে। সমুদ্রের চরে গাংচিল, বক,বালি হাঁস ঝাকে ঝাকে আসে মাছ খাওয়ার লোভে। মুক্ত পরিবেশে এ সব পাখি দলবদ্ধভাবে বিচরণ করতে দেখলে মনে দোলা লাগে। কচিখালী অভয়ারন্যের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কচিখালী খাল। দিনের যে কোন সময় এ খাল দিয়ে ভ্রমন করলে দু’ ধারে অজস্র চিত্রল হরিণ, শুকর, বন মোরগ মনের আনন্দে বিচরণ করতে দেখা যায়। হরিণগুলো দু’ পা উপরে তুলে কেওড়া পাতা খেতে দেখা যায়। মনে হয় যেন হরিণগুলো মানুষের পোষা। কচিখালী থেকে নৌকা যোগে কচিখালী খাল ধরে বনের ভিতর দিয়ে কটকা যাওয়া যায়।
পর্যটন স্থান বাদামতলাঃ
কচিখালী আর কটকার ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের নাম বাদামতলা। এখানকার সাগর সৈকত অত্যন্ত নির্জন মনোরম এবং ভয়ংকরও বটে। শীতকালে এ সৈকতে অসংখ্য বাঘের পায়ের ছাপ উপভোগ করা যায়। এখানকার সামুদ্রিক ঢেউ গুলি পর্যটকদের মনে যে কোন বড় ধরনের সমুদ্র সৈকতের আনন্দ উপহার দিয়ে থাকে। তবে এখানে শুধুমাত্র কটকার জামতলা বা কচিখালী থেকে পায়ে হেঁটে পৌছানো সম্ভব। ঊভয় প্রাপ্ত থেকেই এখানে পৌছাতে সময় এক ঘন্টার মত। বাদামতলায় পরিবেশ বিভাগের আওতায় একটি ক্যাম্প নির্মিত হয়েছে। শীত মওসুমে এখানে সন সংগ্রহের জন্য শ্রমিক সমাগম ঘটে, তারা সন ক্ষেতের মাঝেই অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করে থাকে। দৈনন্দিন বাঘের সাক্ষাতের বিষয়টি তাদের মনে সাময়িক শংকা সঞ্চয় করলেও তারা সন্ত্রস্ত নয় কারণ এদের কাছে জীবনের চেয়ে ক্ষুদা বড়।পর্যটন স্থান তিনকোনা আইল্যান্ড :
তিনকোণা আইল্যান্ড সুন্দরবনের ভ্রমনেচ্ছুদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। যদিও এখানে অবস্থানের কোন সুবিধা বা অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। পশুর ও মরা পশুর নদীর সংগম স্থলে অবস্থিত এ স্থানে যখন তখন অসংখ্য হরিণ ও বানর এর মাতামাতি দর্শকদের দৃষ্টি কাড়ে। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর দর্শন পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হলেও মরাপশুর নদীর পাড়ের এ স্থানটি বাঘের দর্শন লাভের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তিনকোণা আইল্যান্ড এর অতি সন্নিকটে কোকিল মনি নামক স্থানে বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়ি অবস্থিত। এছাড়া দুবলার চর ভ্রমনকারীদের জন্যও তিনকোন আইল্যান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।পর্যটন স্থান দুবলার চর :
এটি তুষারশুভ্র কাশফুল আর সবুজ ঘাষে ঢাকা সমুদ্রের কোল ঘেষে অবস্থিত বিশাল উম্মুক্ত প্রান্তর। মংলা হতে দুবলার চর ৯০ কিঃ মিঃ দুরত্ব।এই স্থানটি আজকাল মৎস্য শুটকিকরনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে জেলেরা বছরের ছয় মাস অবস্থান করে দেশী ছোট নৌকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগরে মাছ ধরে এবং এই উম্মুক্ত প্রান্তরে রোতে শুকিয়ে শুটকি করে। এই শুটকি মাছ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করা হয়। এই জেলে পল্লীতে জেলেদের অবসর সময় অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমুহ খুবই উপভোগ্য। পর্যটকেরা এখানে শুটকি প্রক্রিয়াকরণ সচক্ষে দেখতে পারেন এবং একই সাথে জেলেদের কঠিন জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হতে পারেন। শীত মওসুমে জেলেরা রাজস্ব প্রতান করে অস্থায়ী বাসস্থান নির্মানের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। দুবলায় শীতকালে হাজার হাজার টন সামুদ্রিক ম্ছ আহরিত হয় যার অধিকাংশই শুকানোর পর দেশ-বিদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। কবরখালী, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, নারিকেল বাড়িয়া, মেহের আলী, মাঝের কিল্লা, আলোরকোল আর অফিস কিল্লা এই চর গুলির সমন¦য়ে দুবলার চর গঠিত। অফিস কিল্লাকে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় কেন্দ্র অবস্থিত। এখানে ৪টি সাইক্লোন সেন্টারম পানীয় জলের জন্য কয়েকটি পুকুর খনন করা হয়েছে। বর্ষা মওসুমে দুবলা থেকে ইলিশ আহরণ বাবদ রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। শীতের শুরুতে এখানে অনুষ্ঠিত প্রতি বছর কার্তিক মাসের রাশ পুর্নিমার মেলায় দুর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার তীর্থ যাত্রীর আগমন ঘটে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীড়ন এখানে পুন্যান ও পুজো আর্চনা করে থাকেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ইহা একটি তীর্থ স্থান। রাস মেলাটি ৩ দিন ধরে চলে। মেলায় মন্দির তৈরী করে দুর্গা, কালি, গনেস, মহাদেব, শ্রীক্্ৃষ্ণ ও সখীর মুর্তি স্থাপন করে পুজা করা হয়। রাস মেলায় শুধু হিন্দু যাত্রীরাই অংশ গ্রহন করে না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোকজনও আসে এখানে মেলা দেখতে। মেলার সময় প্রায় ১৫-২০ হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে।পর্যটন স্থান মান্দারবাড়িয়া :
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ভ্রমনের জন্য যে সব গুরুত্বপূর্ণ ও মনোরম স্থান রয়েছে মান্দারবাড়িয়া তাদের মধ্যে একটি। মান্দারবাড়িয়া একটি বন্য প্রানী অভয়ারণ্য। মংলা হতে মান্দারবাড়িয়ার দুরত্ব ১১০ কিঃমিঃ। সুন্দরবন পশ্চিমে বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যকে সাধারণতঃ মান্দারবাড়িয়া বন্যপ্রানী অভয়ারন্য বলে। সুন্দরবনের প্রায় পশ্চিমে দক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেঁষে মান্দারবাড়িয়া অবস্থিত। মালঞ্চ নদীর মোহনা পাড়ি দিয়ে এখানে যেতে হয়। তাই শীত মৌসুমেই শুধু মান্দারবাড়িয়া ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত সময়। বনের নির্জন পরিবেশ, চারিদিকে অথই পানি, বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ, সুর্য উঠা ও অস্ত যাওয়ার দৃশ্য পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।মান্দারবাড়িয়ার সন্নিকটেই রয়েয়ে বিখ্যাত পটণী আইল্যান্ড, দুর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বঙ্গোপসাগরে এক খন্ড সবুজ পাথর ভাসছে। শীত মৌসুমে মান্দারবাড়িয়াতে শুকটি মাছ শুকানোর দৃশ্যও অবলোকন করা যায়। খুব সাহস নিয়ে মান্দারবাড়িয়া ভ্রমনে যেতে হয়। এখানকার ঘন বনে রয়েছে। অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী থেকে শুরু করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, কচ্ছপ, সাপ, কাঁকড়া, ইত্যাদির সমারোহ। এখানকার সমুদ্র সৈকতে বাতাসের প্রবাহ সাগর ঢেউয়ের তীরে আছড়ে পড়ার দৃশ্য, সাগরের গর্জন, সমুদ্রের অথৈ জলরাশি পর্যটক ও পর্যটনের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশেষ করে এখানে পুর্নিমার জ্যোৎার রূপালী আলোয় সাগর তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী উপভোগ করতে করতে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। শীত মৌসুমে সমুদ্র তীরে অসংখ্য বিশাল কচ্ছপের রৌদ্র স্নান দেখে আপনি অভিভুত হবেন।
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন